বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দর: বাংলাদেশে তিনটি প্রধান সমুদ্র বন্দর রয়েছে—চট্টগ্রাম, মংলা ও পায়রা। এছাড়া মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণাধীন

উত্তর: বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দর তিনটি
বাংলাদেশে তিনটি সমুদ্র বন্দর রয়েছে যেমন :
চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর , মংলাসমুদ্র বন্দর, পায়রা সমুদ্র বন্দর।
চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর:
বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর এবং দেশের আমদানি-রপ্তানির মূল কেন্দ্র।
এ বন্দর ১৮৮৭ সালে তার কার্যক্রম শুরু করে এটি কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থিত। বর্তমানে বন্দরটি বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রায় ৯০ শতাংশ পরিচালনা করে থাকে। এ কারণে চট্টগ্রাম বন্দরকে দেশের অর্থনীতির “লাইফলাইন” বলা হয়।
বন্দরটির মাধ্যমে তৈরি পোশাক, চামড়াজাত পণ্য, কৃষিজ সামগ্রীসহ বিভিন্ন রপ্তানি পণ্য বিদেশে যায় এবং আমদানি হয় খাদ্যশস্য, জ্বালানি, কাঁচামাল ও শিল্প যন্ত্রপাতি। আধুনিক কনটেইনার টার্মিনাল, গুদাম সুবিধা এবং উন্নত তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে বন্দরের কার্যক্রম আরও গতিশীল হয়েছে।
আঞ্চলিক যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে এই বন্দর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর শুধু বাংলাদেশের নয়, দক্ষিণ এশিয়ারও একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। ভবিষ্যতে নতুন টার্মিনাল, গভীর সমুদ্র বন্দর এবং উন্নত ব্যবস্থাপনা যুক্ত হলে এর কার্যক্রম আরও বিস্তৃত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মোংলা সমুদ্র বন্দর:
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা বিভাগে অবস্থিত একটি বন্দর হচ্ছে মংলা সমুদ্র বন্দর। মংলা সমুদ্র বন্দর বাংলাদেশের ২য় বৃহত্তম ও ২য় ব্যস্ততম সমুদ্র বন্দর। এটি খুলনা নগরীর পশুর নদীর তীরে অবস্থিত। বন্দরটি ১৯৫০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। মোংলা সমুদ্র বন্দরটি প্রথমে খুলনার চালনাতে প্রতিষ্ঠিত হয় এজন্য বন্দরটির আদি নাম ছিল চালনা।
পায়রা সমুদ্র বন্দর:
পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়ায় অবস্থিত বাংলাদেশের তৃতীয় সমুদ্র বন্দর পায়রা সমুদ্র বন্দর । ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টিয়াখালী ইউনিয়নের ইটবাড়িয়া গ্রামে এর ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন। ২০১৬ সালের ১৩ ই আগস্ট সমুদ্র বন্দরটি আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।
মাতারবাড়ী সমুদ্র বন্দর:
কক্সবাজার জেলার মহেশখালীতে রয়েছে নির্মাণাধীন গভীর সমুদ্র বন্দর, যা মাতারবাড়ী সমুদ্র বন্দর নামে পরিচিত। বাংলাদেশের প্রথম গভীল সমুদ্র বন্দর হবে এটি এবং এর নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ হলে বাংলাদেশের বাণিজ্যে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। বন্দরটির গভীরতা প্রায় ১৬ মিটার এবং এখানে বড় আকারের কনটেইনার জাহাজ ভিড়তে পারবে, যা চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরে সম্ভব নয়।
মাতারবাড়ী সমুদ্র বন্দরকে ঘিরে কনটেইনার টার্মিনাল, কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে। এর ফলে দেশের আমদানি–রপ্তানি কার্যক্রম আরও দ্রুত ও সাশ্রয়ী হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বন্দর চালু হলে বাংলাদেশ আঞ্চলিক বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম লজিস্টিক হাবে পরিণত হবে।
সরকার আশা করছে, ২০২৬ সালের মধ্যে বন্দরটি আংশিকভাবে চালু করা যাবে। এটি কেবল দেশের অর্থনীতিতেই নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বাংলাদেশের অবস্থানকে শক্তিশালী করবে।